ওমরাহ

নবম শ্রেণি (মাধ্যমিক ২০২৪) - ইসলাম শিক্ষা - Islamic Study - ইবাদাত | | NCTB BOOK
4
4

ওমরাহ

ওমরাহ আরবি শব্দ। এর অর্থ হলো ভ্রমণ করা, কোনো স্থানের যিয়ারত করা। হজের নির্দিষ্ট দিনগুলো তথা ৮ যিলহজ থেকে ১৩ যিলহজ্জ পর্যন্ত ছয় দিন ব্যতীত বছরের যেকোনো সময় ইসলামি শরিয়ত নির্ধারিত পন্থায় কা'বা শরিফ তাওয়াফ ও সাফা-মারওয়ায় সাঈ করাকে ওমরাহ বলে। ওমরাহ এর ফরয দুটি যথা: (১) ইহরাম বাঁধা (২) বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করা

২. মাথা মুণ্ডানো অথবা চুল ছাঁটা। 

ওমরাহ এর সুন্নতসমূহ 

১. ইহরামের আগে গোসল করা। গোসল সম্ভব না হলে ওযু করলেও চলবে। 

২. একটি চাদর ও একটি সেলাইবিহীন লুঙ্গিতে ইহরাম বাঁধা। 

৩. উঁচু স্বরে তালবিয়া পাঠ করা। 

৪. তাওয়াফের সময় ইজতিবা করা। ইজতিবা হলো ডান বগলের নিচ দিয়ে চাদর পেঁচিয়ে বাম কাঁধের ওপর রাখা। 

৫. সম্ভব হলে হাজরে আসওয়াদ চুম্বন করা।

ইহরাম বাঁধার পূর্বে গোঁফ, চুল ও নখ কেটে গোসল করে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হয়ে ইহরামের জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। গোসল সম্ভব না হলে ওযু করে নিলেও যথেষ্ট হবে। অতঃপর আতর বা সুগন্ধি থাকলে ব্যবহার করতে হবে। তবে সেন্ট ব্যবহার করা নিষেধ।

এর পর মীকাত থেকে ওমরাহ-এর নিয়্যতে ইহরাম বাঁধতে হবে। সেলাইবিহীন দুটি কাপড়, চাদর ও লুঙ্গির মতো পরিধান করতে হবে। এই কাপড়ের রং সাদা হওয়া উত্তম। ইহরামের কাপড় পরিধানের পর দুই রাকা'আত সালাত আদায় করে ওমরাহ এর নিয়্যত করার সঙ্গে সঙ্গে তালবিয়া পাঠ করতে হবে। পুরুষগণ জোরে জোরে আর নারীরা আস্তে আস্তে তালবিয়া পড়বেন। এরপর কা'বা শরিফ সাতবার তাওয়াফ করতে হবে। হাজরে আসওয়াদ থেকে তাওয়াফ শুরু করে আবার হাজরে আসওয়াদের নিকট গিয়ে তাওয়াফ শেষ করতে হবে। এভাবে সাত চক্কর দিতে হবে। সম্ভব হলে হাজরে আসওয়াদ চুম্বন করতে হবে। আর সম্ভব না হলে ইশারা করে হাতে চুম্বন করলেও যথেষ্ট হবে। তাওয়াফ শেষে মাকামে ইবরাহিমে বা এর পিছন বরাবর কিছু দূরে, এখানে সম্ভব না হলে মসজিদে হারামের যেকোনো স্থানে দুই রাকা'আত তাওয়াফের সালাত আদায় করতে হবে। অতঃপর কিবলামুখী হয়ে দাঁড়িয়ে তিন চুমুকে যমযমের পানি পান করতে হবে।

অতঃপর সাতবার সাফা-মারওয়ার মাঝে সাঈ বা দৌঁড়াতে হবে। সাফা-মারওয়ার মাঝ পথে দুই সবুজ চিহ্নের মধ্যবর্তী স্থানে পুরুষদের জোরে দৌঁড়াতে হবে। সাঈর জন্য নির্ধারিত কোনো দোয়া নেই।

সাঈ সমাপ্ত হলে মাথা মুণ্ডন বা মাথার চুল ছোট করে হেঁটে নিতে হবে। এভাবেই ওমরাহ সম্পন্ন হয়ে যাবে এবং ইহরামের পর যা হারাম ছিল এখন তা হালাল হয়ে যাবে।

ওমরাহ-এর ফযিলত

সক্ষম হলে সারা জীবনে একবার ওমরাহ করা সুন্নাতে মুয়াক্কাদা। আর সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ হলো ঐ সকল কাজ যা মহানবি (সা.) নিজে সর্বদা পালন করতেন এবং অন্যদের তা পালন করতে তাগিদ দিতেন। এটা যখনই করা হোক, তার জন্য প্রতিদান ও বরকত রয়েছে। তবে রমযান মাসে ওমরাহ করার ফযিলত বেশি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, 'নিশ্চয় রমযান মাসের ওমরাহ একটি হজের সমান।'

ওমরাহ পালন করলে মহান আল্লাহর হুকুম পালন করা হয়। আল্লাহ তা'আলা পবিত্র কুরআনে ঘোষণা করেন, 'তোমরা আল্লাহর উদ্দেশ্যে হজ ও ওমরাহ পরিপূর্ণভাবে পালন করো।' (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৯৬)

ওমরাহ বান্দার গুনাহসমূহ মোচন করে দেয়। দরিদ্রতা দূর করে জীবনে সচ্ছলতা আনয়ন করে। মহানবি (সা.) বলেন, 'তোমরা হজ ও ওমরাহ আদায় করো। কেননা, হজ ও ওমরাহ দারিদ্র্য বিমোচন করে ও গুনাহ দূর করে দেয় ঠিক সেভাবে, যেভাবে হাঁপরের আগুন লোহা, সোনা ও রুপা থেকে ময়লা দূর করে দেয়।' (তিরমিযি)

তিনি আরো বলেন, 'এক ওমরাহ থেকে পরবর্তী ওমরাহ এর মধ্যবর্তী সময়ে সংঘটিত সগিরা গুনাহর জন্য কাফফারা বা প্রায়শ্চিত্ত করে।' (বুখারি)

ওমরাহ একটি ফযিলতপূর্ণ ইবাদাত। যাদের সামর্থ্য আছে তাদের জীবনে অন্তত একবার ওমরাহ পালন করা উচিত। মহানবি (সা.) জীবনে চার বার ওমরাহ পালন করেছেন। সুতরাং আমরা ওমরাহ পালনের নিয়মকানুন ভালোভাবে জানব এবং যখনই সামর্থ্য হবে তখন তা আদায় করব।

 

Content added By
Promotion